পদ্মা সেতুর দুই পাশে যানজট

By | June 26, 2022

উদ্বোধনের একদিন পর রোববার ভোর থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে পদ্মা সেতু। ভোর ছয়টায় সেতু খুলে দেয়ার পর সেতুর দুই প্রান্তে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে।

 

মুন্সীগঞ্জের সাংবাদিক মীর নাসিরউদ্দীন উজ্জ্বল জানাচ্ছেন, টোল প্লাজায় এক একটি যানবাহনের টোল আদায় করতে যে সময় লাগছে, তার তুলনায় যানবাহনের চাপ অনেক বেশি হওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এছাড়া প্রথম দিন সেতু পার হতে আগ্রহীদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়াও যানজটের একটা কারণ বলে উল্লেখ করছিলেন তিনি।

 

বিবিসির সংবাদদাতা নাগিব বাহার সকালে মাওয়া গেছেন। সেতু পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলছেন, তার সামনে এক কিলোমিটারের মত দীর্ঘ যানজট রয়েছে। তবে খুব ধীরে ধীরে এগোচ্ছে গাড়িগুলো। আশা করছেন, আধা ঘণ্টার মধ্যে টোল প্লাজায় পৌঁছে যাবেন।

 

মীর নাসিরউদ্দীন উজ্জ্বল টোল প্লাজা এলাকা থেকে বলছিলেন, এক একটি গাড়ির টোল আদায় করতে দু-তিন মিনিটের মত লাগছে। মোট ছটা বুথ থেকে টোল আদায় করা হলেও, যানবাহনের চাপ অত্যধিক হওয়ায় এই যানজট তৈরি হয়েছে।

 

তবে তিনি বলছিলেন, পদ্মা সেতু প্রথমবারের মত পার হওয়া নিয়ে মানুষের উচ্ছ্বাস এত বেশি যে যানজট নিয়ে খুব বেশি অভিযোগ তার চোখে পড়েনি। নাগিব বাহারও বলছেন, যানজট থাকলেও তা নিয়ে মানুষের মধ্যে খুব একটা আক্ষেপ চোখে পড়ছে না তার।

 

এক দম্পতির সাথে কথা বলেছেন তিনি, যারা যানজট দেখে বাস থেকে নেমে সেতু অভিমুখে হাঁটা শুরু করেছেন।এই দম্পতির বাড়ি নদীর ঠিক ওপারে শরীয়তপুরে। তারা বলছিলেন, তারা মূলত প্রথম দিন সেতু পার হওয়ার জন্যই এসেছেন।

 

“সারা জীবন এখান থেকে ফেরি পার হয়েছি। যখন সেতু তৈরি হচ্ছিল তখনও বিশ্বাস হয়নি, কোনদিন এই সেতু পার হতে পারবো। তাই নিজের অবিশ্বাস দূর করার জন্য আজ এসেছি” – বলছিলেন তারা।

 

সেতু পার হওয়ার অপেক্ষায় থাকা আরেকজন বাসযাত্রী বলছিলেন, ‘পদ্মা নদীকেও যে বশে আনা যায়’ সেটা তার বিশ্বাস করতে এখনো কষ্ট হচ্ছে। ভোর ছটা থেকে যান চলাচলের জন্য সেতু খুলে দেয়ার কথা থাকলেও দশ মিনিট আগেই যানবাহন চলতে শুরু করে সেতুর উপর দিয়ে।

 

বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে তৈরি ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটির মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের ১৯টি জেলার সঙ্গে দেশের বাকি অংশের সংযোগ তৈরি করেছে। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘ সেতু। ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

 

পদ্মা সেতু নির্মাণে যত কারিগরি চ্যালেঞ্জ ছিলো প্রকৌশলীদের। শনিবার এই সেতু উদ্বোধনের পর প্রথম টোল দিয়ে সেতু পার হন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এদিন সারাদিনই সেতু যান চলাচলের জন্য বন্ধ রাখা হয় নিরাপত্তাজনিত কারণে। এদিন ফেরিও বন্ধ রাখা হয়। ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে এই রুট দিয়ে সড়কপথে যোগাযোগ কার্যত অচল ছিল এই রুট দিয়ে।

 

শনিবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের কারণে নিরাপত্তা ইস্যুতে মাওয়া-জাজিরা পয়েন্টে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হলেও রোববার সেতুর পাশাপাশি ফেরিও চালু রাখা হয়েছে কয়েকটি। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্পোরেশন আগেই জানিয়ে রেখেছে, পদ্মা সেতু চালু হলেও শিমুলিয়া ঘাট থেকে সীমিত আকারে ফেরি চলাচল অব্যাহত থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *