
বাঙ্গি অনেকের কাছে একটি বিস্বাদময় ফল। এক প্রকার অবহেলিত ফলও বলা চলে। এই ফলকে নিয়ে এখন ফেসবুকেও রেসারেসি । শুরু হয়েছে ট্রলের পাহাড় । অথচ এই ফল স্বাস্থ্যের জন্য যে কতটা উপকারী তা আমাদের অনেকেই জানে না । এই ফলের স্বাদ একটু পানসে হয় আর এই জন্যই বলা হয় বাঙ্গির মিষ্টি কম পুষ্টি বেশি।
এটি একটি স্বাস্থ্যকর ফল। পাকা বাঙ্গি ফলে রয়েছে ম-ম সৌরভ। এই ফলে রয়েছে অনেক গুণ। কাঁচা আবস্থায় সবজি হিসেবেও রান্না করে খাওয়া যায়। বাঙ্গি ফলে রয়েছে আমিষ, খনিজ এবং ফ্যাটি অ্যাসিড লবণ । ক্ষুধামান্দ্য এবং মূত্রস্বল্পতা দূর করতে পারে এই বাঙ্গি।
এলাকাভেদে এই ফলকে বানি, কাঁকুড়, খরমুজ ও বলা হয়। বাঙ্গি শসাগোত্রীয় ফল। আমাদের দেশের প্রায় সব এলাকাতে গ্রীষ্মকালে এই ফল উৎপাদন করা হয় । ধারনা করা হয় বাঙ্গির জন্ম হয়েছে ইরান বা আফগানিস্তানে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকাতেও এই ফলের চাষ করা হয়।
বাঙ্গিগাছ শসাগাছের মতো। কাঁচা অবস্থায় এই ফলের রং অনান্য ফলের মতো সবুজাভ হয়। কাঁচা আবস্থায় সবজি হিসেবেও রান্না করে খাওয়া যায়। এবং পাকলে হলুদাভ হয়। পাকা বাঙ্গি ফলের সুমিষ্ট সৌরভ আছে। একটি বাঙ্গি ফলের ওজন এক থেকে চার কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
বাঙ্গি সাধারনত দুই জাতের হয় । বেলে ও এঁটেল বাঙ্গি। বেলে বাঙ্গির শাঁস হয় নরম প্রকৃতির । এর খোসা খুব পাতলা এবং শাঁস খেতে বালুর মতও লাগে। খেতে তেমন মিষ্টি নয়, পানসে হয়। ওপরদিকে, এঁটেল বাঙ্গির শাঁস একটু শক্ত কচকচে এবং তুলনামূলক মিষ্টি হয়।
ডায়াবেটিস রোগীরা বাঙ্গি খেলে ক্ষতি হয় না। এটি অত্যন্ত উপকারী ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার। শিশু, যুবক কিংবা বৃদ্ধ সবাই এই ফল খেতে পারে।
টামটার ঐতিহ্যবাহী বাঙ্গি ফল
কুমিল্লায় দাউদকান্দি উপজেলার টামটাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রামে বাঙ্গি চাষ করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মৌসুম শুরু হয় এই ফলের। সুমিষ্ট ঘ্রাণ মৌসুমজুড়ে চলতে থাকে। এখন এই ফলের মৌসুম, এই জন্য এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এখানকার বাঙ্গি গোলাকার হয়, অনেকটা মিষ্টি কুমড়ার মতো। এ প্রজাতির বীজ চীন থেকে এসেছে বলে স্থানীয় কৃষক ও কৃষি কার্যালয় সূত্র থেকে জানা গেছে। এ কারণে এটিকে চীনা বাঙ্গি বলা হয়।
টামটা গ্রামের কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এখানে বাঙ্গি চাষ করা হচ্ছে। এই গ্রামের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই বসে বাঙ্গির পাইকারি বাজার। এই বাজার শুরু হয় ভোর ছয়টায় সময় এবং শেষ হয় সকাল নয়টায়। পাইকারি ক্রেতারা এখান থেকে ফল কিনে ট্রাকে করে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যায়। আকারভেদে খুচরা বাজারে একটি বাঙ্গি বিক্রি হয় ২০ টাকা থেকে ৬০ টাকায় ।
আরও পড়ুনঃ
‘ওমিক্রন’ কতটা বিপজ্জনক?